দিনগুলো…

ললিতমোহন দাস লেন ধরে এগুচ্ছে রিকসাটি। রিকসা চালকের পায়ের ধাক্কায় রিকসার প্যাডেল ঘুরছে বনবন। তাগড়া জোয়ান রিকসাচালক নানা কসরত দেখিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে এগিয়ে চলেছে গন্তব্যে। তার নয়, আমার। অথবা আমার এবং তার। একটু আগে গনকটুলি লেনে তালগোল পাকানো গোছের জ্যাম পেরিয়ে এসেছে সে। রাস্তা ফাঁকা হতেই বাম হাতের চেটোয় ঘাম মুছে আবার বনবন করে প্যাডেল ঘুরানোর কসরতে মন দেয়। ততক্ষণে আমি আবার বইতে মনোনিবেশ করেছি। রিকসায় উঠেই বইটা মেলে ধরেছিলাম, এক কি দু’পাতা পড়েছি, আর ঝপ করে গতরাতের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। রাত তিনটা অবধি স্মৃতির ওলট-পালট। এবং রাতের গভীরে ডুবে যাওয়া, আরও কত কি! অথচ গতকালের দিনটি ছিল বিষণ্নতা গলে গলে পড়ার মতো। মনের ভেতর স্যাতস্যাতে আবহাওয়া আর গুমোট কান্না। সে অবস্থাটি বহাল রইলো সারাক্ষণ। মন খারাপের বিষয়টা গলার কাছে পাক খেয়ে ঘুরছিলো যখন, খুব দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। মনের ওপর এতো চাপ…। আর, অথচ, ললিতমোহন দাস লেনের তিনতলা, অচেনা একটি বাড়ির রঙের বাহুল্যে ভরা দেয়ালের কোল ঘেষে যখন রিকসাটি থামলো আবার, মনের নির্ভার হবার পালা শুরু হলো! মনে হলো মনের মধ্যে ঢাঁক আর বাজনা-বাদ্যির আসর বসেছে ! অথচ, কালকেই কতো বিষণ্নতা…আর আজকে সকাল হতেই মনে প্রশান্তি খেলা করছে! এই অদ্ভুত, আপাত অর্থহীন রোদ-বৃষ্টির মন নিয়ে ভয়ানক জ্বালা দেখি!
কতদিন ধরে বিতিকিচ্ছিরি জ্যাম আর ঝামেলা পেরিয়ে অফিসে যেতে হচ্ছিলো আমার। কিছুদিন আগে এক কলিগ এই রিকসার পথটা চিনিয়ে দিলো। শহরের মূল সড়কগুলো এড়িয়ে, কিছুটা শর্টকাটে এই পথটা এতোদিন কেনো আমার কাছে অনাবিষ্কৃত ছিল তা ভেবে অবাক হই। রিকসায় চড়ে বেড়াতে খুবই ভালো লাগে আমার। শহরের জ্যাম ছাড়িয়ে যখন অফিস যেতাম তখন হতাশায় মুষড়ে পড়তাম। গাড়িগুলো যখন আমাকে ফেলে সাঁইসাঁই করে চলে যেত তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করতো। ঘড়ি ঘুরছে অথচ আমি তখনো কীভাবে অফিসে যাবো তা-ই জানি না। তারপর যখন কিছু একটায় ওঠার সৌভাগ্য হয়, তখন দেখি ভয়ানক জ্যাম শহরটাকে গলা চেপে ধরে আছে। এই জ্যাম আর ভিড়ের শহরে রোজকার অফিস যাত্রা আমাদের ক্লান্ত ক্লান্ত করে। অথচ পরিস্থিতি এখন আর তেমন নেই। সকালের এই রিকসা জার্ণি এক চমৎকার রিলিফ যেন। লম্বা একটা জার্ণি যদিও। একঘেয়েমি দূর করতে কোনো কোনোদিন বই পড়ি, কোনোদিন কিছুই করি না। স্রেফ বসে থাকি আর চারপাশের মানুষগুলোর মুখ দেখতে থাকি। তাদের মুখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করি। কারো চোখে হাসি, কারো কান্না, কারো চোখে শুধুই উদাসীনতা। কারো চোখে শূন্যতা। এইসব দেখতে দেখতে যখন পুরোনো ঢাকার ধার ঘেষে, আজিমপুর হয়ে মূল শহরে প্রবেশ করি, তখন নিজেকে এই শহরে অনাহুত মনে হয়।

This entry was posted in মুক্তগদ্য and tagged . Bookmark the permalink.

27 Responses to দিনগুলো…

  1. afsarnizam বলেছেন:

    ভালো লাগলো লেখাটি

  2. Iqram বলেছেন:

    আরো বড় হইতে পারতো ।

  3. shanto বলেছেন:

    মোবাইল দিয়ে পড়লাম আর ভাবতেছিলাম কত দারুন লিখেন আপু!

  4. রিয়াদ বলেছেন:

    হা হা । গুড রাইটিং । আসলেইবই পড়লে টাইম টা কিভাবে যায় বুঝাই যায় না ।

  5. leenadilruba বলেছেন:

    খুব ভালো অভ্যেস…সকলে যদি বই পড়তো, দেশটা পাল্টে যেত।

  6. শান্ত বলেছেন:

    হে হেহে আপনার প্রশংসা শুনলে মনে হয় বোরাকে চেপে আসমানের দিকে যাইতেছি।
    এই সাইটটা ভালো হইছে। বাসায় এসে সব কটি লেখাই পড়লাম। আশা করি আপনার লেখা মিস করার দিন শেষ!

  7. বাপ্পি বলেছেন:

    ভালো লাগছে আপু। নিয়মিত লিখলে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে।

    আর সাইট এ এটা সেটা প্লাগিন/ উইজেট দিতে পারেন 😀
    পাঠকেরও সুবিধা হবে।

  8. বই আমার নিত্যসঙ্গী। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে আমার বইগুলো।

    ভালো লেগেছে লেখাটি।

  9. সবুজ মোহাইমিনুল বলেছেন:

    ভাল লাগল লেখাটি

  10. ফেনী ব্লগ বলেছেন:

    আপু আপনার লেখা দেখতে চাই ফেনী ব্লগে।
    http://www.feniblog.tk
    আশা থাকবে আমাদের পথচলায় আমাদের সাহায্য করবেন।
    ধন্যবাদ।

  11. অর্ণব বলেছেন:

    অসাধারণ, লিখেন আপনি।

  12. নাজমুল হুদা বলেছেন:

    ভারী সুন্দর একটা ব্লগ। সবগুলো লেখা পড়তেই হবে।

  13. iqram বলেছেন:

    ধরাধামে আছেন ?

    • leenadilruba বলেছেন:

      🙂

      বন্ধু, আপ্নে কই?

      • iqram বলেছেন:

        এতলা দিন পরে রিপ্লাই দিলেন । আমিতো কমেন্ট করার পর সপ্তাখানেক প্রতিদিন চেক করতাম । পরে ভাবছিলাম আপনে মনে হয় এই ব্লগ বাদ দিছেন । আমরাবন্ধুতে একটা সিরিজ লেখা শুরু করছি । সময় করে আইসেন ।

leenadilruba এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল