আমার আত্মজীবনী পাঠ- দ্বিতীয় পর্ব

‘‘কবিরা বোধহয় সবাই উন্মাদ। এক ধরনের পাগলামির সঙ্গে কবিতার একটা বন্ধুত্ব আছে। যুক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে কবি হওয়া যেমন শক্ত, কবিদের পক্ষে ততোধিক কঠিন যুক্তিসম্পন্ন মানুষ হওয়া।” পাবলো নেরুদা তাঁর জীবনীগ্রন্থ-“Memoirs” (অনুস্মৃতি)-এ কবি বলতে এ-ধরনের একটি চরিত্রকে পাঠকের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। এই সংজ্ঞার দর্পনে নেরুদার মুখটি প্রতিস্থাপন করলে ঠিক এরকম একটি চরিত্রকেই খুঁজে পাওয়া যাবে- যিনি প্রকৃতই যুক্তিহীন, বোহেমিয়ান, স্বাপ্নিক, প্রেমময় আর উদ্দাম একটি জীবন কাটিয়ে গিয়েছেন।

কবিদের জীবন কী এমনই হয় ! যদি বলি, নেরুদা যেন কাটিয়ে গিয়েছিলেন একটি কবিরই জীবন। পাগলামি, দুষ্টুমি, অযত্ন একদিকে, আরেকদিকে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে বিপ্লবের পথে হাঁটার কারণে দেশ ছেড়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো। কিন্তু, জীবনের শেষ বেলায় যখন কবিতার জন্যই ১৯৭১ সালের ২১ অক্টোবর নোবেল পুরস্কার পেলেন নেরুদা, ১৩ ডিসেম্বর স্টকহোমে ভাষণ দিতে ওঠেন কবি, সেখানে তথাকথিত ভাষণের কোনো লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেদিন তিনি তাঁর কবিতার জন্য সংগ্রাম, তাঁর দেশের জন্য সংগ্রাম নিয়ে অবিস্মরণীয় একটি বক্তৃতার মালা সাজিয়ে যেন আরেকটি কালজয়ী কবিতার জন্ম দেন। তাইতো, নেরুদাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা কবির পদমর্যাদা দিলে অত্তুক্তি হয় না। নেরুদা প্রেম আর বিপ্লবের কবিতা লিখে স্মরণীয় হয়েছেন। তাঁর প্রেমের কবিতা জীবন্ত, প্রাণবন্ত, তীব্র কামনার ঘোরে আঁকা। আর তাঁর বিপ্লবের কবিতা যেন কবিতার ফ্রেমবন্দি নির্দোষ কোনো শব্দবন্ধ নয়, সেগুলো সবই এক-একটি আগুনের ফুলকি। প্রেম আর বিপ্লবের কবি তাঁর জীবনীগ্রন্থ নিজের জীবদ্দশায় বের করে যেতে করতে পারেন নি। নেরুদার মৃত্যুর পর তাঁর তৃতীয় স্ত্রী মাতিলদে নেরুদা ও মিগুয়েল ওতেরোর উদ্যোগে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবির মালা যার গলায় পরানো হয়, সেই লোকটির আত্মজীবনীগ্রন্থটিও একইভাবে আদরণীয়। বিশ্বের কয়েকটি সফল জীবনীগ্রন্থ নিয়ে ছোট তালিকা করলে মেময়র্স বা অনুস্মৃতি অনায়াসে জায়গা করে নেবে।

১২ জুলাই ১৯০৪ সালে দক্ষিন চিলির একটি অখ্যাত গ্রামে জন্ম নেয়া শিশুটির পিতা ছিলেন একজন সামান্য রেল ইঞ্জিন চালক। বেড়ে উঠেছিলেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। সেই পরিবিশে বেড়ে উঠে তিনবেলা খাবার জুটানোই যেখানে ছিল কঠিন কাজ, সেখানে কবিতা লেখা তো অনেক দূরের বিষয়। এমনকি যখন নেরুদা স্প্যানিশ ভাষায় কবিতা রচনা শুরু করেন, তখন তাঁর পিতার কঠোর বাধার মুখোমুখি হন। এমনকি স্বনামেও কবিতা লিখতে পারেন নি তিনি। আশ্রয় নিতে হয়- পাবলো নেরুদা ধরনের একটি ছদ্ম নাম রাখার, যেটি দেখে পিতা বুঝতে পারবেন না কবিতাটি তাঁর পুত্রেরই লেখা। নেরুদার আসল নাম-নেফতালি রিকার্দো রেইয়েস বাসোআলতো। বিপ্লবের পথ ধরে যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তখন ছদ্মনাম নেন-সেনিওর লেগাররেতা।

সারা জীবন কবিতা লিখে গেছেন নেরুদা। তাঁর সারাটা জীবন বিপ্লবেরও। জীবনে কবিতা আর নারী পাশাপাশি ছায়া রেখে চলেছে। কবিতার নারীরা তাঁর জীবনে এসেছে, চলে গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ নেরুদার মনের ওপর পদছাপ রেখে গেছেন, কেউ কেউ রাখতে পারেন নি। তবে, তাঁর জীবনে দোল খাওয়া প্রায় সব প্রেম নিয়েই তিনি কবিতা রচনা করেছেন। সেসব কবিতা এতটাই প্রেমময় আর দেহজ যে, নেরুদাকে শরীর সর্বস্ব পুরুষ বলে চিহ্নিত করলে মিথ্যে বলা হয় না। সবকিছুর সরল স্বীকারোক্তি প্রদানও নেরুদার অন্যতম বৈশিষ্ট বটে। নেরুদার নারী সম্ভোগের কাহিনি মানুষের মুখে মুখে ফেরে। আত্মজীবনীতেও নেরুদা সেসব আড়াল করেন নি। বরং ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে মাঝে-মধ্যে কৌতুককর আর কৌতুহল উদ্দীপক নানা পরিস্থিতির উদ্রেক করেছেন। তাঁর জীবনে প্রথম নারী সম্ভোগের নায়িকাকে তিনি চেনেন না, জানেন না। তিনি খুব বেশি নিশ্চিতও নন, কে সেই নারী। এমন মজার আর অদ্ভুত একটি ঘটনা গ্রন্থের শুরুতেই লেখা হয়েছে। তিনি তখন নিতান্তই বালক অবস্থা থেকে যৌবনে পদার্পন করেছেন। স্থানীয় এর্নান্দেসরাদের একটি খামারে পথ চলতে গিয়ে ভিড়ে গিয়েছিলেন। নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে তাদের সাথে গম মাড়াই করা, গান করা, গলা অব্ধি মদ গেলা সবই চলতে থাকে। রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে পুরুষদের জন্য শোবার নির্ধারিত স্থান খড়ের গাদায় শুয়ে পড়েন নেরুদা। মেয়েরা শুয়েছিল তাবুতে। সবাই যখন ঘুমে অসাড়, তখন নেরুদা টের পান একটি নারী দেহ তাঁকে পেঁচিয়ে ধরেছে। প্রথমে কি না কি ভেবে তিনি ভয় পেয়েছিলেন, কিন্তু পরে নারীটির আহবানে সাড়া দিয়ে চমৎকার একটি রাত্রি যাপনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ঠিক এরকমই, যখন যে জায়গায় গিয়েছেন সবখানেই নেরুদা নারী সঙ্গী জুটিয়ে নিয়েছিলেন। সেসব নারীরা জীবনীগ্রন্থে অনেক জায়গা দখলে নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কবির মনে কতটুকু রেখাপাত করেছিলেন তাতে আমি সন্দিগ্ন। শুধু একজনা। একজন নারীর কথা নেরুদা বিশেষভাবেই তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন। আমাদের প্রান্তবর্তী দেশ বার্মার মেয়ে যোসি ব্লিস নামের সেই মেয়েটি বার্মার রাষ্ট্রদূত থাকাকালে নেরুদার সঙ্গীনি ছিলেন। প্রেমের আরেক নাম তো জ্বালাতন। নারীটি নেরুদার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে রাতদিন তাঁকে নিয়েই থাকতে চাইতেন। শুধু তাই নয়, নেরুদা কারো সাথে কথা বলুক, মিশুক তা-ও যোসি ব্লিস চাইতেন না। প্রেম যখন এমনতর যন্ত্রণায় রূপান্তরিত হলো তখনই নেরুদা তাকে ছেড়ে যান। ছেড়ে গেলেও নেরুদার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত যোসি ব্লিস তাঁর মনে ছিল আদরের, প্রিয়তার সবগুলো উপাদান নিয়েই। আমরা যখন নেরুদার কবিতা পড়তে যাই, তখন দেখি যোসি ব্লিসকে নিয়ে লেখা হয়েছে কবিতার পর কবিতা। ড. সফিউদ্দিন আহমদ এর অনুবাদে দুটি কবিতার শিছু অংশ পড়া যাক।

ব্লিস তোমাকে খুব মনে পড়ছে-ভীষণ মনে পড়ছে তোমাকে।
হ্যাঁ ব্লিস, আমার জানতে ইচ্ছে করছে, শেষতক তোমার কী হয়েছিল !
সেই যে যুদ্ধ, মহাতান্ডবের যুদ্ধ,
পুড়ে, ছাইভস্ম করে দিল উজ্জ্বল আলোকিত সুসজ্জিত শহরটাকে-
হায় ব্লিস ! তুমিও কি মিশে গেলে এই ছাইভস্মে?

আরেকটি,

ব্লিস-
জ্বলে উঠেছিল আগুন
যেন দাবানল,
আমি ছিলাম না তখন-
এখন হয়তো বা কবরেও নেই তুমি
মৃত্যুতে মহাযাত্রায় আজ সাবলীল
আর আমার ভালোবাসাও হলো
চির বিচ্ছেদের চিতায় বিদায়-
এখন চিতা বহ্নিমান কেবল আমার হৃদয়ে।

জীবনে মোট তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। প্রথমবার বিয়ে করার কারণ নেরুদা তাঁর আত্মজীবনীতে এভাবেই তুলে ধরেছেন-“অসহনীয় নিঃসঙ্গতায় যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে বিবাহ করার জন্য মনস্থ করলাম। আধাডাচ-আধামালয়ী দীর্ঘাঙ্গী এক সুন্দরীকে- যাঁর নাম মারিয়া আন্তোনিয়েতা হ্যাগনার।” ব্যস। এটুকুই। এই নারীটকে নিয়ে পুরো জীবনীগ্রন্থজুড়ে নিজের আর কোনো অভিব্যক্তি নেরুদা প্রকাশ করেন নি। সংসারযাপনের কথা তো নয়ই, এমনকি সেই নারীর সঙ্গে কখন বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেল, সেটিও নয়! দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে রয়েছে একটিই বাক্য- ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল গোছের বিবৃতি সেটি। তবে তৃতীয় স্ত্রী মাতিলদে তাঁর স্বপ্ন, কল্পনার সবটুকুই দখল করে নিয়েছিলেন। নেরুদার কবিতাগ্রন্থগুলো পড়লে দেখা যায়, মাতিলদেকে নিয়ে লেখা রয়েছে অসংখ্য কবিতামালা।

চিলির বানিজ্যদূত, রাষ্ট্রদূত হিসেবে নেরুদা পৃথিবীর নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভারতবর্ষ ভ্রমণে তাঁর দুবার দুরকম অভিজ্ঞতা হয়। পরাধীন ভারতে গিয়ে মানুষের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হন নেরুদা। তিনি সেখানকার মানুষ, তাদের সংস্কৃতি আর ব্রিটিশদের দ্বারা ভারতীয়দের শাসন আর নির্যাতনের কারণে ব্রিটিশদের প্রভু আর ভারতীয়দের দাসানুদাস নামক একটি সম্পর্কিত অবস্থা অনুধাবন করে ব্যাথিত হন। নেরুদা বলেন, “ব্রিটিশ প্রভু আর তাদের দাসানুদাস প্রজাদের মধ্যেকার এই ভয়ঙ্কর ফাঁক পূরণ করার চেষ্টা ব্রিটিশরা কোনও সময়ই করেন নি, আর এই অমানবিক বিচ্ছিন্নতার জন্যেই প্রাচ্যের মানুষদের সমাজ-সংস্কৃতির কোনও মূল্যায়নই ওদের দ্বারা হয়নি।” স্বাধীন ভারতে গিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা হয় একদম বিপরীত। তখনকার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর অসৌজন্যমূলক আচরণ আর রূঢ় ব্যবহারে নেরুদা ভারত থেকে প্রায় পালিয়ে এসেছিলেন। এমনকি জীবনে একটিবার তাজমহল দেখার স্বাধটিও পূরণ হয়নি তাঁর।

ভারতের রাজনীতি, রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে নেরুদার মূল্যায়ন ছিল কখনো নির্লিপ্ত ভঙ্গির কখনো আন্তরিক আর গভীর। এদের মধ্যে গান্ধিজী সম্পর্কে একটি উক্তি না বললেই নয়। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় তাঁর ডায়েরিতে মহাত্মা গান্ধি সম্পর্কে বলেছিলেন,

সে অনেক দিন হল ঋত্বিক ঘটক বলেছিল, গান্ধিজী একটি আদ্যন্ত শুয়োরের বাচ্চা

আর নেরুদা তাঁর আত্মজীবনীতে গান্ধিজী সম্পর্কে বলেছেন,

গান্ধিজীর মুখ ধুর্ত শেয়ালের মতো

নির্বাসন জীবনে কমরেড নেরুদা রচনা করেছেন অসংখ্য কবিতা। মাঝে-মধ্যেই সেই জীবনের যন্ত্রণায় মুষড়ে পড়তেন তিনি। সুভাষ মুখোপাধ্যায়-এর অনুবাদে এ-ধরনের একটি কবিতার কিছু অংশ পড়া যাক-

আমি শুধু জানি পাখিদের হারানো জিনিস,
পেছনে ফেলে আসা সমুদ্র কিংবা আমার বোনের কান্না।
কেন আলাদা এত অঞ্চল, কেন দিনের
পায়ে পায়ে দিন আসে ! কেন কালোর রাত
মুখের মধ্যে ঘনায়? মৃতের দল কেন?

এবার ড. সফিউদ্দিন আহমদ-এর অনুবাদে বিপ্লবের কবিতার চারটি লাইন:

দীপাধারে জ্বলে উঠবে আগুন, লালে লাল আগুন
কয়লাখনির ধোঁয়া বিপ্লবের আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ছে
বিপ্লবের অঅগুনে শত্রুকে ছাই করে
তবেই আমাদের সংগ্রাম থামবে।

একজন কবি যখন কবির জীবনই কাটিয়ে যান তখন আসলে মুগ্ধ হয়েই দেখতে হয়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত কবি পরিচয়ধারী নেরুদা নিজের জীবন আর কবিতা নিয়ে কী ভাবতেন, পাঠকের মনে যদি এই প্রশ্নটি জাগে, তবে, নেরুদার উক্তি দিয়েই লেখাটি শেষ করি-

“আমার কবিতা ও আমার জীবন চিলির খরস্রোতা জলের ধারাটিকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় জন্মলাভ করে আমেরিকার খরস্রোতা একটি নদীর মতো বয়ে চলে। সেই নদীর দুই তটে যা কিছু ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে, যা কিছু জন্মেছে, সবই সে গ্রহন করে আপন ধারায় বয়ে নিয়ে সমুদ্রে এসে মিশেছিল। আসক্তি, রহস্য, ভালোবাসা- সব কিছু নিয়েই সে মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল।”

বইটি যারা পড়তে চান, অনুবাদকর্ম: অনুস্মৃতি, ভবানীপ্রসাদ দত্ত। বেরিয়েছিল একুশে থেকে। একুশে এখন অবলুপ্ত হয়েছে। কিনে নিয়েছে প্রথমা প্রকাশনী। বইটি প্রথমায় পাবেন।

This entry was posted in রিভিউ. Bookmark the permalink.

4 Responses to আমার আত্মজীবনী পাঠ- দ্বিতীয় পর্ব

  1. aliarafatshanto বলেছেন:

    প্রিয় ব্লগ লেখকের দারুন একটা সিরিজ!

    • leenadilruba বলেছেন:

      ব্যক্তিগত ব্লগ বলেই হয়তো সিরিজটি থেমে থেমে এগুবে। কিন্তু এই সিরিজটি নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক বড়ো। কতো কতো জীবনীগ্রন্থ পড়েছি…সেসব থেকে বাছাই করে গুরুত্বপূর্ণগুলো তুলে আনার ইচ্ছে আছে। তুমিও যদি কেবল পড়ো, আমার লেখা স্বার্থকতা পাবে।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s